গীতাপাঠ বাংলা – সপ্তম অধ্যায় – বিজ্ঞান-যোগ

Srimad Bhagavad Gita Bangla Chapter-7

শ্রীভগবানুবাচ

ময্যাসক্তমনাঃ পার্থ যোগং যুঞ্জন্মদাশ্রয়ঃ।
অসংশয়ং সমগ্রং মাং যথা জ্ঞাস্যসি তচ্ছৃণু।। ১।।

অনুবাদঃ 

শ্রীভগবান বললেন- হে পার্থ! আমাতে আসক্তচিত্ত হয়ে, আমাতে মনোনিবেশ করে যোগাভ্যাস করলে, কিভাবে সমস্ত সংশয় থেকে মুক্ত হয়ে আমাকে জানতে পারবে, তা শ্রবণ কর।

জ্ঞানং তেহহং সবিজ্ঞানমিদং বক্ষ্যাম্যশেষতঃ।
যজজ্ঞাত্বা নেহ ভূয়োহন্যজজ্ঞাতব্যমবশিষ্যতে।।২।।

অনুবাদঃ

 আমি এখন তোমাকে বিজ্ঞান সমন্বিত এই জ্ঞানের কথা সম্পূর্ণরূপে বলব, যা জানা হলে এই জগতে আর কিছুই জানবার বাকি থাকে না।

মনুষ্যাণাং সহস্রেষু কশ্চিদ্ যততি সিদ্ধয়ে। 
মততামপি সিদ্ধানাং কশ্চিন্মাং বেত্তি তত্ত্বতঃ।।৩।।

অনুবাদঃ 

হাজার হাজার মানুষের মধ্যে কদাচিৎ কোন একজন সিদ্ধি লাভের জন্য যত্ন করেন, আর সেই প্রকার যত্নশীল সিদ্ধদের মধ্যে কদাচিৎ একজন আমাকে অর্থাৎ আমার ভগবৎ-স্বরূপকে তত্ত্বত অবগত হন।

ভূমিরাপোহনলো বায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ। 
অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা।।৪।।

অনুবাদঃ 

ভূমি, জল, বায়ু, অগ্নি, আকাশ, মন, বুদ্ধি ও অহঙ্কার-এই আট প্রকারে আমার ভিন্না জড়া প্রকৃতি বিভক্ত।

অপরেয়মিতস্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধিমে পরাম্। 
জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্যতে জগৎ।।৫।।

অনুবাদঃ

 হে মহাবাহো! এই নিকৃষ্টা প্রকৃতি ব্যতীত আমার আর একটি উৎকৃষ্টা প্রকৃতি রয়েছে। সেই প্রকৃতি চৈতন্য-স্বরূপা ও জীবভূতা; সেই শক্তি থেকে সমস্ত জীব নিঃসৃত হয়ে এই জগৎকে ধারণ করে আছে। 

এতদযোনীনি ভূতানি সর্বাণীত্যুপধারয়। 
অহং কৃৎস্নস্য জগতঃ প্রভবঃ প্রলয়স্তথা।।৬।।

অনুবাদঃ 

আমার এই উভয় প্রকৃতি থেকে জড় ও চেতন সব কিছু উৎপন্ন হয়েছে। অতএব নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো যে, আমিই সমস্ত জগতের উৎপত্তি ও প্রলয়ের মূল কারণ।

মত্তঃ পরতরং নান্যৎ কিঞ্চিদস্তি ধনঞ্জয়। 
ময়ি সর্বমিদং প্রোতং সূত্রে মণিগণা ইব।।৭।।

অনুবাদঃ

 হে ধনঞ্জয়! আমার থেকে শ্রেষ্ঠ আর কেউ নেই। সূত্রে যেমন মণিসমূহ গাঁথা থাকে, তেমনই সমস্ত বিশ্বই আমাতে ওতঃপ্রোতভাবে অবস্থান করে।

রসোহহমপ্সু কৌন্তেয় প্রভাস্মি শশিসূর্যয়োঃ।
প্রণবঃ সর্ববেদেষু শব্দঃ খে পৌরুষং নৃষু।।৮।।

অনুবাদঃ

 হে কৌন্তেয়! আমিই জলের রস, চন্দ্র ও সূর্যের প্রভা, সর্ব বেদের প্রণব, আকাশের শব্দ এবং মানুষের পৌরুষ।

পুণ্যো গন্ধঃ পৃথিব্যাং চ তেজশ্চাস্মি বিভাবসৌ। 
জীবনং সর্বভূতেষু তপশ্চাস্মি তপস্বিষু।।৯।।

অনুবাদঃ

 আমি পৃৃথিবীর পবিত্র গন্ধ, অগ্নির তেজ, সর্বভূতের জীবন এবং তপস্বীদের তপ।

বীজং মাং সর্বভূতানাং বিদ্ধি পার্থ সনাতনম্। 
বুদ্ধির্বুদ্ধিমতামস্মি তেজস্তেজস্বিনামহম্।।১০।।

অনুবাদঃ 

হে পার্থ, আমাকে সর্বভূতের সনাতন কারণ বলে জানবে। আমি বুদ্ধিমানের বুদ্ধি এবং তেজস্বীদের তেজ।

বলং বলবতাং চাহং কামরাগবিবর্জিতম্।
ধর্মাবিরুদ্ধো ভুতেষু কামোহস্মি ভরতর্ষভ।।১১।।

অনুবাদঃ

 হে ভরতর্ষভ! আমি বলবানের কাম ও রাগ বিবর্জিত বল এবং ধর্মের অবিরোধী কামরূপে আমি প্রাণীগণের মধ্যে বিরাজমান।

যে চৈব সাত্ত্বিকা ভাবা রাজসাস্তামসাশ্চ যে। 
মত্ত এবেতি তান্ বিদ্ধি ন ত্বহং তেষু তে ময়ি।।১২।।

অনুবাদঃ 

সমস্ত সাত্ত্বিক, রাজসিক ও তামসিক ভাবসমূহ আমার থেকেই উৎপন্ন বলে জানবে। আমি সেই সকলের অধীন নই, কিন্তু তারা আমার শক্তির অধীন।

ত্রিভির্গুণময়ৈর্ভাবৈরেভিঃ সর্বমিদং জগৎ। 
মোহিতং নাভিজানাতি মামেভ্যঃ পরমব্যয়ম্।।১৩।।

অনুবাদঃ 

(সত্ত্ব, রজ, ও তম) তিনটি গুণের দ্বারা মোহিত হওয়ার ফলে সমগ্র জগৎ এই সমস্ত গুণের অতীত ও অব্যয় আমাকে জানতে পারে না।

দৈবী হ্যেষা গুণময়ী মম মায়া দুরত্যয়া। 
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে।।১৪।।

অনুবাদঃ

 আমার এই দৈবী মায়া ত্রিগুণাত্মিকা এবং তা দুরতিক্রমণীয়া। কিন্তু যাঁরা আমাতে প্রপত্তি করেন, তাঁরাই এই মায়া উত্তীর্ণ হতে পারেন। 

ন মাং দুষ্কৃতিনো মূঢ়াঃ প্রপদ্যন্তে নরাধমাঃ।
মায়য়াপহৃতজ্ঞানা আসুরং ভাবমাশ্রিতাঃ।।১৫।।

অনুবাদঃ 

মূঢ়, নরাধম, মায়ার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে এবং যারা আসুরিক ভাবসম্পন্ন, সেই সমস্ত দুস্কৃতকারীরা কখনও আমার শরণাগত হয় না।

চতুর্বিধা ভজন্তে মাং জনাঃ সৃকৃতিনোহর্জুন।
আর্তো জিজ্ঞাসুরর্থাথী জ্ঞানী চ ভরতর্ষভ।।১৬।।

অনুবাদঃ

 হে ভরতশ্রেষ্ঠ অর্জুন! আর্ত, অর্থার্থী, জিজ্ঞাসু ও জ্ঞানী-এই চার প্রকার পুণ্যকর্মা ব্যক্তিগণ আমার ভজনা করেন।

তেষাং জ্ঞানী নিত্যযুক্ত একভক্তির্বিশিষ্যতে। 
প্রিয়ো হি জ্ঞানিনোহত্যর্থমহং স চ মম প্রিয়ঃ।।১৭।।

অনুবাদঃ

 এই চার প্রকার ভক্তের মধ্যে নিত্যযুক্ত, আমাতে একনিষ্ঠ তত্ত্বজ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ। কেন না আমি তাঁর অত্যন্ত প্রিয় এবং তিনিও আমার অত্যন্ত প্রিয়।

উদারাঃ সর্ব এবৈতে জ্ঞানী ত্বাত্মৈব মে মতম্। 
অস্থিতঃ স হি যুক্তাত্মা মামেবানুত্তমাং গতিম্।।১৮।।

অনুবাদঃ

 এই সকল ভক্তেরা সকলেই নিঃসন্দেহে মহাত্মা, কিন্তু যে জ্ঞানী আমার তত্ত্বজ্ঞানে অধিষ্ঠিত, আমার মতে তিনি আমার আত্মস্বরূপ। আমার অপ্রাকৃত সেবায় যুক্ত হয়ে তিনি সর্বোত্তম গতিস্বরূপ আমাকে লাভ করেন।

বহুনাং জন্মনামন্তে জ্ঞানবান্মং প্রপদ্যতে। 
বাসুদেবঃ সর্বমিতি স মহাত্মা সুদুর্লভঃ।।১৯।।

অনুবাদঃ 

বহু জন্মের পর তত্ত্বজ্ঞানী ব্যক্তি আমাকে সর্ব কারণের পরম কারণ রূপে জেনে আমার শরণাগত হন। সেইরূপ মহাত্মা অত্যন্ত দুর্লভ।

কামৈস্তৈস্তৈর্হৃতজ্ঞানাঃ প্রপদ্যন্তেহন্যদেবতাঃ।
তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তাঃ স্বয়া।।২০।।

অনুবাদঃ

 জড় কামনা-বাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে, তারা অন্য দেব-দেবীর শরণাগত হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে বিশেষ নিয়ম পালন করে দেবতাদের উপাসনা করে।

যো যো যাং তনুং ভক্তঃ শ্রদ্ধয়ার্চিতুমিচ্ছতি। 
তস্য তস্যাচলাং শ্রদ্ধাং তামেব বিদধাম্যহম্।।২১।।

অনুবাদঃ 

পরমাত্মরূপে আমি সকলের হৃদয়ে বিরাজ করি। যখনই কেউ দেবতাদের পূজা করতে ইচ্ছা করে, তখনই আমি সেই সেই ভক্তের তাতেই অচলা শ্রদ্ধা বিধান করি।

স তয়া শ্রদ্ধয়া যুক্তস্তস্যারাধনমীহতে। 
লভতে চ ততঃ কামান্ময়ৈব বিহিতান্ হি তান্।।২২।।

অনুবাদঃ

 সেই ব্যক্তি শ্রদ্ধাযুক্ত হয়ে সেই দেবতার আরাধনা করেন এবং সেই দেবতার কাছ থেকেই আমারই দ্বারা বিহিত কাম্য বস্তু অবশ্যই লাভ করেন।

অন্তবত্তু ফলং তেষাং তদ্ ভবত্যল্পমেধসাম্।
দেবান্ দেবযজো যান্তি মদ্ভক্তা যান্তি মামপি।।২৩।।

অনুবাদঃ

 অল্পবুদ্ধি ব্যক্তিদের আরাধনা লব্ধ সেই ফল অস্থায়ী। দেবোপাসকগণ দেবলোক প্রাপ্ত হন, কিন্তু আমার ভক্তের আমার পরম ধাম প্রাপ্ত হন।

অব্যক্তং ব্যক্তিমাপন্নং মন্যন্তে মামবুদ্ধয়ঃ। 
পরং ভাবমজানন্তো মমাব্যয়মনুত্তমম্।।২৪।।

অনুবাদঃ

 বুদ্ধিহীন মানুষেরা, যারা আমাকে জানে না, মনে করে যে, আমি পূর্বে অব্যক্ত নির্বিশেষ ছিলাম, এখন ব্যক্তিত্ব পরিগ্রহ করেছি। তাদের অজ্ঞতার ফলে তারা আমার অব্যয় ও সর্বোত্তম পরম ভাব সম্বন্ধে অবগত নয়।

নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়াসমাবৃতঃ। 
মূঢ়োহয়ং নাভিজানাতি লোকো মামজমব্যয়ম্।।২৫।।

অনুবাদঃ 

আমি মূঢ় ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনও প্রকাশিত হই না। তাদের কাছে আমি আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়ার দ্বারা আবৃত থাকি। তাই, তাঁরা আমার অজ ও অব্যয় স্বরূপকে জানতে পারে না।

বেদাহং সমতীতানি বর্তানাননি চার্জুন। 
ভবিষ্যাণি চ ভূতানি মাং তু বেদ ন কশ্চন।।২৬।।

অনুবাদঃ 

হে অর্জুন! পরমেশ্বর ভগবানরূপে আমি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে অবগত। আমি সমস্ত জীব সম্বন্ধে জানি, কিন্তু আমাকে কেউ জানে না।

ইচ্ছাদ্বেষসমুত্থেন দ্বন্দ্বমোহেন ভারত। 
সর্বভূতানি সম্মোহং সর্গে যান্তি পরন্তপ।।২৭।।

অনুবাদঃ

 হে ভারত! হে পরন্তপ! ইচ্ছা ও দ্বেষ থেকে উদ্ভত দন্দ্বের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে সমস্ত জীব মোহাচ্ছন্ন হয়ে জন্মগ্রহণ করে।

যেষাং ত্বন্তগতং পাপং জনানাং পুণ্যকর্মণাম্।
তে দ্বন্দ্বমোহনির্মুক্তা ভজন্তে মাং দৃঢ়ব্রতাঃ।।২৮।।

অনুবাদঃ 

যে সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তির পাপ সম্পূর্ণরূপে দূরীভূত হয়েছে এবং যাঁরা দ্বন্দ্বমোহ থেকে মুক্ত হয়েছেন, তাঁরা দৃঢ় নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ভজনা করেন।

জরামরণমোক্ষায় মামাশ্রিত্য যতন্তি যে। 
তে ব্রক্ষ তদ্ বিদুঃ কৃৎস্নমধ্যাত্নং কর্ম চাখিলম্।।২৯।।

অনুবাদঃ 

যে সমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তি জরা ও মৃত্যু থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাকে আশ্রয় করে যত্ন করেন, তাঁরা প্রকৃতপক্ষে ব্রক্ষভূত, কেন না তাঁরা অধ্যাত্মতত্ত্ব ও কর্মতত্ত্ব সব কিছু সম্পূর্ণরূপে অবগত।

সাধিভূতাধিদৈবং মাং সাধিযজ্ঞং চ যে বিদুঃ।
প্রয়াণকালেহপি চ মাং তে বিদুর্যুক্তচেতসঃ।।৩০।।

অনুবাদঃ 

যাঁরা অধিভূত-তত্ত্ব, অধিদৈব-তত্ত্ব ও অধিযজ্ঞ-তত্ত্ব সহ আমাকে পরমেশ্বর ভগবান বলে অবগত হন, তাঁরা আমাতে আসক্তচিত্ত, এমন কি মরণকালেও আমাকে জানতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Shopping Cart

Add Or Remove Service

If you receive a call from us, it will remain our official number ie 011 6927 0725, if you are called from any other number, please ignore it, we will not collect your personal information, please Do not provide information to anyone, such as your debit card, credit card, bank account details or OTP, if you provide any of your information, we will not be responsible for doing so.

Successful

Book Now